নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি: সঠিক সময়ে নামাজ আদায়ের গাইড

Oct 23, 2025 by miodeya.com 83 views

নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি: সঠিক সময়ে নামাজ আদায়ের গাইড

ইসলাম ধর্মে নামাজ একটি অন্যতম স্তম্ভ এবং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর এটি ফরজ। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোত্তম উপায় হলো নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা। তাই, নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়সূচি কেবল আমাদের নামাজ আদায়কেই সহজ করে না, বরং আমাদের জীবনযাত্রাকে একটি সুশৃঙ্খল পথে পরিচালিত করতেও সাহায্য করে। সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করলে একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়, তেমনই অন্যদিকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র রহমত ও বরকত প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এই গাইড-এর মাধ্যমে আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শুরু ও শেষ হওয়ার সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই আপনার নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করতে পারেন।

ফজরের নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি

ফজরের নামাজ দিনের প্রথম নামাজ এবং এটি প্রভাতের আলো ফোটার ঠিক আগ মুহূর্তে আদায় করার সুন্নাত। ফজরের নামাজের শুরু হওয়ার সময় হলো রাতের শেষ এবং দিনের শুরু। নির্দিষ্টভাবে বললে, রাত্রি যখন শেষ হতে থাকে এবং পূর্ব দিগন্তে আলোর রেখা দেখা দিতে শুরু করে, তখন থেকেই ফজরের নামাজ এর সময় শুরু হয়। এই সময় কে সাফফ (ভোরের আলো) বলা হয়। ফজরের নামাজের শেষ হওয়ার সময় হলো সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে, সূর্যোদয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে নামাজ শেষ করা মুস্তাহাব, যাতে সূর্যোদয়ের সময় নামাজ আদায় না হয়ে যায়, কারণ সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়া মাকরূহ। ফজরের নামাজের সময় অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, কারণ এই সময় আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতারা বান্দার আমল লিপিবদ্ধ করেন। ইসলামিক কালেন্ডার বা নামাজের সময়সূচি অ্যাপ ব্যবহার করে আপনার অবস্থান অনুযায়ী ফজরের নামাজের নির্ভুল সময় জেনে নেওয়া উচিত। সময় পরিবর্তনশীল এবং এটি ঋতু ও ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভরশীল। তাই, প্রতিদিনের সময়সূচি দেখে নেওয়া আবশ্যক। ভোরের এই শান্ত পরিবেশ নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যা মনে আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়।

ফজরের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন মজিদে ফজরের নামাজের বিষয় উল্লেখ আছে এবং নবী করিম (সাঃ) ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে, পুরুষদের জন্য মসজিদে জামায়াতে ফজরের নামাজ আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। ফজরের সময় ঘুম ত্যাগ করে নামাজ আদায় করা আত্মসংযমের পরিচায়ক এবং আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ। যারা ফজরের নামাজ নিয়মিত আদায় করেন, তারা সারাদিনের জন্য আল্লাহ্‌র সুরক্ষা ও বরকত লাভ করেন। সময় সম্পর্কে সচেতন থাকা নামাজ আদায়ের প্রথম শর্ত। অনলাইনে বা মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে সহজে আপনার শহরের নামাজের সময়সূচি পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট সহ বাংলাদেশের সকল জেলার নামাজের সময় আলাদা হয়। তাই, সর্বদা আপডেট সময়সূচি দেখে নামাজ আদায় করুন। কিছু বিশেষ দিন বা অবস্থায় নামাজের সময় কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, যেমন রমজান মাসে সাহরী ও ইফতারের সময়ের সাথে ফজরের নামাজের সময় ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালনে সহায়ক।

যোহরের নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি

যোহরের নামাজ দিনের দ্বিতীয় নামাজ এবং এটি দুপুরের প্রখর রোদ কিছুটা কমার সাথে সাথে আদায় করা হয়। যোহরের নামাজের শুরু হওয়ার সময় হলো সূর্য যখন ঠিক মধ্যগগন থেকে হেলে পড়তে শুরু করে। এই সময় কে যাওয়াল বলা হয়। নামাজের সময় গণনার ক্ষেত্রে, সূর্য যখন পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে, তখন থেকেই যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। যোহরের নামাজের শেষ হওয়ার সময় হলো আসরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ, সূর্য পশ্চিম আকাশে যতক্ষণ নিচের দিকে না নামতে শুরু করে, ততক্ষণ যোহরের নামাজ আদায় করা যায়। শাফি মাযহাব অনুযায়ী, ছায়া যখন কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন যোহরের নামাজ এর সময় শেষ হয়ে যায়। তবে, হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, ছায়া যখন বস্তুর দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ হয়, তখন যোহরের নামাজ এর সময় শেষ হয়। এই পার্থক্য নামাজের সময় গণনায় গুরুত্বপূর্ণ। যোহরের নামাজ গরমের দিনে আদায় করার গুরুত্ব ইসলামে বর্ণিত আছে। হাদিসে এসেছে, গরম বেশি হলে যোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্ব করে পড়ার জন্য নবী করিম (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে গরমের প্রকোপ কিছুটা কমে। আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা সহজ করে দিয়েছেন, তাই আদায় করাই উত্তম। প্রতিদিনের নামাজের সময়সূচি দেখে যোহরের নামাজ শুরুর সাথে সাথে আদায় করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। বিশেষ করে, অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে থাকা ব্যক্তিদের জন্য যোহরের নামাজ পড়তে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে, তাই সময় মাফিক নামাজ পড়ার প্রচেষ্টা করা উচিত। সময় মতো নামাজ পড়া আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। গরমের দিনে ঠান্ডা জায়গায় বা ছায়ায় নামাজ পড়ার চেষ্টা করা উত্তম।

যোহরের নামাজের সময় সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ায় যোহরের সময় কিছুটা দীর্ঘ হয়, অন্যদিকে শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় যোহরের সময় কম থাকে। তাই, দৈনিক সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় খেয়াল রেখে নামাজের সময়সূচি তৈরি করা হয়। ইসলামিক স্কলাররা নামাজের সময় নির্ধারণের জন্য জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিত ব্যবহার করেন, যাতে সকলের জন্য সঠিক সময় উপলব্ধ হয়। বর্তমান যুগে স্মার্টফোন অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে যেকোনো স্থানের যোহরের নামাজের সময় খুব সহজেই জানা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যোহরের নামাজের সময় কিছুটা পার্থক্য থাকে, যেমন পূর্বাঞ্চলে ও পশ্চিমাঞ্চলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে পার্থক্য থাকার কারণে নামাজের সময়ও পার্থক্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার যোহরের নামাজের সময় চট্টগ্রামের চেয়ে কিছুটা আলাদা হতে পারে। এই কারণে, আপনার স্থানীয় সময়সূচি অনুযায়ী নামাজ আদায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামিক মাসাঈল এবং ফতোয়া অনুসরণ করা উচিত। গরমকালে যখন তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে, তখন তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন, তবে ওয়াক্ত হওয়ার পর। আল্লাহ্‌ বলেন: “নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে” (সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)।

আসরের নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি

আসরের নামাজ দিনের চতুর্থ নামাজ এবং এটি সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আদায় করা হয়। আসরের নামাজের শুরু হওয়ার সময় হলো যোহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমান হয় (শাফি মাযহাব) বা দ্বিগুণ হয় (হানাফি মাযহাব), তখন যোহরের নামাজের সময় শেষ হয়ে আসরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। আসরের নামাজের শেষ হওয়ার সময় হলো সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে, সূর্যোদয় হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে নামাজ শেষ করা মুস্তাহাব, কারণ সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়া মাকরূহ। আসরের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বেশি, এবং এ নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করে, তার আমল ব্যর্থ হয়ে যায়” (সহীহ বুখারী)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে আসরের নামাজ আদায় করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যারা আসরের নামাজ আদায় করেন, আল্লাহ্‌ তাদের আমল কবুল করেন। প্রতিদিনের নামাজের সময়সূচি দেখে আসরের নামাজ শুরুর সাথে সাথে আদায় করার প্রচেষ্টা করা উচিত, কারণ এই নামাজের ফজিলত অনেক। বিশেষ করে, কর্মজীবী মানুষদের জন্য আসরের নামাজ আদায় করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়, কিন্তু আল্লাহ্‌ তার বান্দার সামর্থ্য অনুযায়ী তার উপর বোঝা চাপিয়ে দেন। তাই, কাজের মাঝে কিছুটা সময় বের করে নামাজ পড়া উচিত। সময় মতো নামাজ পড়া আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাজার কষ্ট হোক না কেন, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা ফরজ করেছেন, তা আদায় করা আমাদের কর্তব্য।

আসরের নামাজের সময় সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ায় আসরের সময় কিছুটা দেরী করে শুরু হয় এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে, অন্যদিকে শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় আসরের সময় তাড়াতাড়ি শুরু হয় এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে। তাই, প্রতিদিনের নামাজের সময়সূচি যাচাই করে নামাজ পড়া আবশ্যক। বাংলাদেশে, বিভিন্ন শহর যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ইত্যাদি জায়গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে পার্থক্য থাকার কারণে আসরের নামাজের সময়ও কিছুটা পার্থক্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, দেশের পূর্বাঞ্চলে সূর্যোদয় যদি পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে তাড়াতাড়ি হয়, তাহলে সেখানে আসরের নামাজের সময়ও তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি শুরু হবে। এই কারণে, আপনার স্থানীয় সময়সূচি অনুযায়ী নামাজ আদায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে নির্ভুল সময় জানা যায়। বিশেষ করে, মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঠিক আগ পর্যন্ত আসরের নামাজ পড়া যায়, কিন্তু সূর্যোদয় পর্যায়ে নামাজ শেষ করা মুস্তাহাব। এই সময় টি খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই কোনো অবস্থায় নামাজ কাজা করা উচিত নয়। আল্লাহ্‌ বলেন: “এবং সূর্য তার নির্ধারিত গন্তব্যে চলছে। এটা প্রবল জ্ঞানী সর্বজ্ঞ আল্লাহ্‌র ব্যবস্থাপনা। এবং চাঁদের জন্য আমরা অবস্থান নির্ধারণ করেছি.., অবশেষে তা শুষ্ক খেজুরের পুরাতন শাখার মতো হয়ে যায়। সূর্যের জন্য এটা সম্ভব নয় যে চাঁদের কাছে পৌঁছাবে, এবং রাত্রি দিনের পূর্ববর্তী নয়। এবং প্রত্যেকটি গ্রহ নিজ নিজ অক্ষ পথে সাঁতার কাটছে।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৮-৪০)। এই আয়াত গুলো আল্লাহ্‌র মহিমা এবং সময় এর গুরুত্ব বর্ণনা করে।

মাগরিবের নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি

মাগরিবের নামাজ দিনের পঞ্চম নামাজ এবং এটি সূর্যাস্তের ঠিক পর থেকে আদায় করা হয়। মাগরিবের নামাজের শুরু হওয়ার সময় হলো সূর্য সম্পূর্ণরূপে অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে যে লাল আভা থেকে যায়, তা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। মাগরিবের নামাজের শেষ হওয়ার সময় হলো ইশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত। তবে, মাগরিবের নামাজ যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যায়, ততই উত্তম। কিছু মাযহাব অনুযায়ী, রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত মাগরিবের নামাজ পড়া যায়, কিন্তু শুরু হওয়ার সাথে সাথে পড়া সুন্নাত। বিশেষ করে, রমজান মাসে রোজা ভাঙ্গার ঠিক পর থেকেই মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয় এবং ইফতারের মূল সময় এটি। এই নামাজের ফজিলত অনেক, এবং এ নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা সহজ করে দিয়েছেন, তা আদায় করাই উত্তম। তাই, মাগরিবের নামাজ শুরুর সাথে সাথে আদায় করার প্রচেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে, কাজ থেকে ফিরে বা অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা থাকলেও, মাগরিবের নামাজ সময় মতো আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ। সময় মতো নামাজ পড়া আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাজার কষ্ট হোক না কেন, আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা ফরজ করেছেন, তা আদায় করা আমাদের কর্তব্য।

মাগরিবের নামাজের সময় সূর্যাস্তের উপর নির্ভরশীল। গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ায় সূর্যাস্ত দেরী করে হয় এবং মাগরিবের নামাজের সময় দেরী করে শুরু হয়, অন্যদিকে শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় সূর্যাস্ত তাড়াতাড়ি হয় এবং মাগরিবের নামাজের সময় তাড়াতাড়ি শুরু হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যাস্তের সময়ে পার্থক্য থাকার কারণে মাগরিবের নামাজের সময়ও পার্থক্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা এবং খুলনার মাগরিবের নামাজের সময়ে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। এই কারণে, আপনার স্থানীয় সময়সূচি অনুযায়ী নামাজ আদায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার শহরের মাগরিবের নামাজের সময় জানা যায়। রমজান মাসে মাগরিবের নামাজের সময় ইফতারের সময়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, তাই সময় ঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন: “আর তুমি তোমার পালনকর্তার নামের তাসবীহ পাঠ করো সকালে ও সন্ধ্যায়।” (সূরা ইনসান, আয়াত ২৫)। এখানে সকাল ও সন্ধ্যা নামাজের সময়কে নির্দেশ করে। মাগরিবের নামাজ সন্ধ্যায় আদায় করা হয় এবং এটি দিনের শেষ নামাজ যা আলো থাকা অবস্থায় পড়া হয়। তাই, এই নামাজের গুরুত্ব অপার।

এশার নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি

এশার নামাজ দিনের শেষ নামাজ এবং এটি রাতের প্রথমে আদায় করা হয়। এশার নামাজের শুরু হওয়ার সময় হলো মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, যখন পশ্চিম আকাশের লাল আভা সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায় এবং রাত্রি স্পষ্ট হতে শুরু করে, তখন থেকেই এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। এশার নামাজের শেষ হওয়ার সময় হলো ভোরের আলো ফোটার আগ পর্যন্ত। তবে, অনেক ইসলামিক স্কলার এবং মাযহাব অনুযায়ী, রাতের মধ্যভাগ পর্যন্ত এশার নামাজ পড়ার সময় রয়েছে। কিছু বিশেষ কারণে যেমন অতি প্রয়োজনে বা যাত্রাপথে থাকলে এশার নামাজ কিছুটা বিলম্ব করে পড়ার অনুমতি রয়েছে, কিন্তু সুন্নাত হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পড়া। এশার নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে যারা রাত্রি জাগরণে আল্লাহ্‌র ইবাদত করেন, তাদের জন্য এশার নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, এশার নামাজ জামায়াতে আদায় করলে যেন অর্ধেক রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। তাই, এশার নামাজ শুরুর সাথে সাথে আদায় করার প্রচেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে, শীতকালে যখন রাত বড় হয় এবং ঠান্ডা বেশি থাকে, তখন এশার নামাজ আদায় করা কিছুটা কষ্টকর হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্‌ তার বান্দার উপর তার ক্ষমতার বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেন না। সময় মতো নামাজ পড়া আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

এশার নামাজের সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ের সাথে সম্পর্কিত। শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় রাত তাড়াতাড়ি শুরু হয় এবং এশার নামাজের সময় তাড়াতাড়ি শুরু হয়, অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ায় রাত দেরী করে শুরু হয় এবং এশার নামাজের সময় দেরী করে শুরু হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাত্রির শুরুতে পার্থক্য থাকার কারণে এশার নামাজের সময়ও পার্থক্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ইত্যাদি শহরের এশার নামাজের সময় সামান্য পার্থক্য হতে পারে। এই কারণে, আপনার স্থানীয় সময়সূচি অনুযায়ী নামাজ আদায় করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সঠিক সময় জানা যায়। কিছু বিশেষ অবস্থায় যেমন মুসাফির বা রোগীর জন্য নামাজ একত্রিত করে পড়ার অনুমতি রয়েছে, যেমন যোহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্রে পড়া যায়। তবে, এটি সাধারণ নিয়ম নয়, এবং এর জন্য নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন: “এবং তুমি তোমার পালনকর্তার নামের তাসবীহ পাঠ করো যতক্ষণ না তুমি সন্তুষ্ট হও।” (সূরা ত্বহা, আয়াত ১৩)। এখানে তাসবীহ পাঠ করা বলতে নামাজ বোঝানো হয়েছে, এবং এর সময় নির্দিষ্ট। এশার নামাজের পর পর বিছানায় যাওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন এড়িয়ে চলা উত্তম। রাতের এই সময় আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভের জন্য খুব উপযোগী।

সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। উপরে উল্লেখিত নামাজের শুরু ও শেষ সময়সূচি সম্পর্কে জেনে নিয়ে, আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এটি মেনে চলার চেষ্টা করব। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন।